Wed. Oct 4th, 2023
খেয়ে না খেয়ে দিন পার করা লালটু, দর্জি মায়ের প্রেরণায় দৈনিক ১৮ ঘণ্টা পড়ালেখা করে বিসিএস ক্যাডার!

অভাবের সময় বাবা বাজারে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাতেন। বাবার মৃত্যুর পর তাদের অভাব আরো প্রকট হয়ে ওঠে। তাদের কোনো খাবার নেই। এ অবস্থায় মা তাদের সংসারের হাল ধরেন। সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। এভাবে ছেলেটিকে বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো হয়। শুধু তাই নয়, এবার বিসিএসে দেশের সেরাদের সাধুবাদ জানাতে এসেছে ছেলেটি। ৩৬তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে ৩য় হয়েছেন।

গল্পটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লাল্টু সরকারকে নিয়ে। টিউশন টিউশন; শোনার খরচ। অভাব-অনটন কাটিয়ে এবার বিসিএসে ছাপ ফেলেছেন তিনি। মায়ের মুখে হাসি ফুটে উঠল।

জানা গেছে, লাল্টু সরকার সাতক্ষীরার তালা সদরের মাঝিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। লাল্টু ভাইবোনের থেকে ছোট। বড় বোন দিপালী সরকার স্বামীর বাড়িতে থাকেন। মা সুলতানা সরকার গ্রামে বাবার রেখে যাওয়া ঝুপড়িতে থাকেন। লাল্টু সরকার 2007 সালে তালা বিদে সরকারি উচ্চশিক্ষা থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৪ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

এরপর ২০০৯ সালে তালা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহাবিদ্যা থেকে জিপিএ-৪.৬০ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে ২০১৩ সালে অনার্স এবং ২০১৪ সালে মাস্টার্স পাস করেন।

লাল্টু সরকারের মা দীপালি সরকার বলেন, “২০০৬ সালে লাল্টুর বাবা-মা চলে যাওয়ার পর আমি খুব অসহায় হয়ে পড়েছিলাম। দিনটা ভালো যায় না। না খেয়ে থাকি। তখন একটি বেসরকারি সংস্থা একটি সেলাই মেশিন দেয়। কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। সেলাই মেশিন দিয়ে ছেলেটি পড়তে শিখছিল।

আমি কখনোই ছেলেকে বেশি টাকা দিতে পারিনি। তবে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। ছেলে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না এটা কি. কিন্তু ছেলে বলেছে সে ভালো চাকরি পেয়েছে। আমাদের কোন অভাব হবে না। ”

লাল্টু সরকার বলেন, “এসএসসি পরীক্ষার এক বছর আগে অভিভাবকরা চলে যান। বাবা মারা যাওয়ার পর আমি পথ হারিয়ে ফেলি। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। যাইহোক, আমি লেখাপড়া চালিয়ে যাই। দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছি। এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হয়েছি। তালা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি টিউশনি করেছিলাম টাকার অভাবে।সে টাকায় পড়ালেখা শেষ করেছি।

আমার মা ও বোন আমাকে সাধ্যমত সাহায্য করেছে। মাস্টার্স শেষ করে চাকরির বিভিন্ন পরীক্ষা দিলাম। বারবার ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আমি বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। 2016 সালে 36 তম বিসিএস পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আমি সেই চেহারায় জানতাম যে আমার নাম আসছে। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলাম। এরপর প্রতিদিন ১৮-১৯ ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম। অবশেষে সারা দেশে শিক্ষা ক্যাডারে ৩য় হলাম। আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।

এখন আমার ওপর আসা রাষ্ট্রের সরকারি দায়িত্ব সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে পালন করতে চায় লাল্টু সরকার। লাল্টু সরকার সকল বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণার মডেল হতে পারে। Worthytalkbd এর পক্ষ থেকে শুভ কামনা।

তথ্যসূত্রঃ ডেইলি বাংলাদেশ