Wed. Oct 4th, 2023
নিরক্ষর বাবা বইগুলো ট্রাঙ্কে আটকে রাখতেন; সেই ছেলেটিই এখন বিসিএস ক্যাডার!

মোঃ আব্দুল হামিদ একটি সরকারি কলেজের প্রভাষক। তার বাবা ড. ইসমাইল হোসেন, মা হামিদা খাতুন। তিনি ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি বগুড়ার কাহালু উপজেলার শিকালন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শিকালনের মিজবাহুল উলূম আলিম মাদ্রাসা থেকে 2006 সালে দাখিল (এসএসসি) এবং 2009 সালে আলিম (এইচএসসি) পাস করেন। এরপর ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ভর্তি হন। ওই মাদ্রাসা থেকে এ প্লাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ভর্তি হন তিনি।

সম্প্রতি জাগো নিউজকে জানিয়েছেন তার বিসিএস জয়ের গল্প ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।

জাগো নিউজ : ছোটবেলা কেমন ছিল?
আবদুল হামিদ: শৈশব সবার মতো; আমারও শৈশব কেটেছে আট দশটা ছেলের মতো। তার শৈশব কেটেছে ফুটবল খেলে, ক্রিকেট খেলে, দৌড়ে ও লাফিয়ে। আমার শৈশব ছিল দুষ্টুমিতে ভরা।

* পড়াশোনায় কোনো বাধা ছিল কি?
আবদুল হামিদ: পড়ালেখা বন্ধ করতে কোনো বাধা ছিল না। আমার বাবা-মা দুজনেই খুব ভালো কিন্তু নিরক্ষর। তাদের সঙ্গে কাজ করলে ভালো হবে বলে মনে করেন তারা। পড়ালেখার কি দরকার? বাবার কাছে শুধু জমিজমা দেখতে পাচ্ছি। তাই আমি আমার বইগুলো ট্রাঙ্কে রেখেছিলাম। আমি ট্রাঙ্ক ভেঙে সেগুলো বের করে নিয়ে পড়াশোনা করি। ট্রাঙ্কে বই রাখার দুটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমার বাবা-মা আমার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তারা খুব ভালো মানুষ। আমি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মাদ্রাসায় পড়ি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে বলে জানতাম না। এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারলাম। তার অনুপ্রেরণায় গ্রাম থেকে এসে বগুড়ায় কোচিং করি। আমি আমার মাদ্রাসা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চান্স পেয়েছিলাম। আগে কেউ পায়নি।

জাগো নিউজ : বিসিএসের স্বপ্ন কবে থেকে দেখেছেন?
আবদুল হামিদ: বিসিএস স্বপ্নের কথা বলি, বিসিএস বলে একটা জিনিস আছে জানতাম না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সবার কাছে শুনতাম বিসিএস বলে কিছু আছে। এসএম হলে থাকতাম। আমার রুমমেট একজন ক্যাডার। এটা দেখে আমার স্বপ্ন বাড়তে থাকে। তখন বুঝলাম অন্যান্য চাকরির তুলনায় বিসিএস মানুষকে সমাজে একটা মূল্য বা গ্রহণযোগ্যতা দেয়। এর জন্য পরিকল্পনা ছিল, কোনো ক্যাডারে; যাতে আমি বিসিএস দিতে পারি এবং পাস করতে পারি।

* বিসিএস যাত্রার গল্প শুনতে চাই:
আবদুল হামিদ: আমার প্রথম বিসিএস ছিল ৩৫তম। একেবারে নতুন নিয়মে শুরু হয়েছে ৩৫তম বিসিএস। তারপরও আমি যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়ে অংশগ্রহণ করি। প্রিলি পাস করলেও লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে পারিনি। ৩৬তম বিসিএসে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভায় যোগ্যতা অর্জন করে শিক্ষা ক্যাডারে নির্বাচিত হই। এরপর ৩৬ ও ৩৬ তারিখে ভাইভা দিয়েও ক্যাডার পরিবর্তন করতে পারিনি।

জাগো নিউজ : বিসিএস ক্যাডারের সংখ্যা কত?
আবদুল হামিদ: আমি বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ৩৬তম বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের একজন প্রভাষক।

জাগো নিউজ : বিসিএসের প্রস্তুতি কেমন হবে? আপনি যদি Vivar টাইপ সম্পর্কে কথা বলতে পারেন:
আবদুল হামিদ: আমি যেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছি, সেভাবে বলছি। আমি মনে করি যারা ইংরেজি এবং ম্যাথস বেসিক্সে শক্তিশালী তাদের জন্য বিসিএস কোনো কঠিন বিষয় নয়। ক্লাস নাইন-টেনে পড়ার সময় শুধু পাশ করার চিন্তা টানে, পরে কষ্ট দেয়।

এই ক্লাসে যারা ইংরেজি, বিজ্ঞান, গণিত বা বেসিক স্ট্রং বিষয়ে পারদর্শী তাদের জন্য বিসিএস সহজ। এছাড়া বাজারে পাওয়া এক সেট বিসিএস বই পড়লেও বিসিএসের প্রস্তুতি সহজ হবে।

বিসিএসের জন্য আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের সংবাদপত্র পড়ুন। আর আপনার জেলা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অনার্স বিষয়, সংবিধান, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকলে আরও ভালো করা সম্ভব।

* আপনি কার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন?
আবদুল হামিদ: আমার বাবা-মা খুবই অশিক্ষিত। তারা শুধু জানতো ছেলে কাজ করবে। তাই তারা সেভাবে কোনো অনুপ্রেরণা দেননি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমার মা তার লেখাপড়ার খরচ দিয়েছিলেন। ইউনিভার্সিটিতে পড়া থেকে শুরু করে চাকরী পাওয়া পর্যন্ত দুজনের খুব সাহায্য হয়েছে। তাদের কথা বলতে হবে।

এই দুজনের অবদান কখনো ভোলার নয়। তারা হলেন- আব্দুল ওয়াহাব নামে আমার এক চাচা। যিনি গুলশানে থাকতেন। আর ইমাম হোসেন, যিনি আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তারা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আর্থিক ও মানসিকভাবে। তাদের অবদান অনস্বীকার্য।

* শিক্ষক হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আবদুল হামিদ: যেহেতু আমি শিক্ষা ক্যাডারে আছি, তাই শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের দেশে অনেক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এগুলোর বাইরেও শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে চাই।