Sat. Sep 23rd, 2023
বাবার টিউশনির টাকায় বিসিএস ক্যাডার তউহীদ আহমদ, জানালেন এক টাকাও হারাম খাবেন না!

সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আশুতোষ চলে যাওয়ার পর নতুন সিভিল সার্জন হিসেবে যোগ দেন ডা. তৌহিদ আহমদ কল্লোল। যোগদানের পর থেকে তিনি হাসপাতাল ও পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছেন। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জ সরকারের দুর্নীতি বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেন। সরকারি হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি হাসপাতালটিকে সুসংগঠিত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডা.

২১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তৌহিদ আহমদ কল্লোল। তিনি সিলেটে প্রথম কর্মস্থল হিসেবে যোগদান করেন। সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন হওয়ার আগে তিনি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ছিলেন। কল্লোল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করেছেন। সিভিল সার্জন তৌহিদ আহমদ কল্লোল বলেন, সুনামগঞ্জে আসার আগে আমি সুনামগঞ্জ হাসপাতালে একটি দুর্নীতির তদন্তের দায়িত্বে ছিলাম। তাই সুনামগঞ্জ হাসপাতাল সম্পর্কে আগে থেকেই কিছুটা ধারণা আছে। সেই ভাবনার আলোকে সুনামগঞ্জ হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা নতুন করে সাজানোর কিছু পরিকল্পনা আমার আছে।

“আমার পরিকল্পনাগুলি স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘমেয়াদী,” তিনি বলেছিলেন। তিন ভাগে বিভক্ত। প্রথমত, ছোট সমস্যাগুলি দ্রুত চিহ্নিত করা এবং সমাধান করা যেতে পারে। তারপর মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। আমার মূল লক্ষ্য হবে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স এবং কর্মচারীদের মধ্যে শৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা কম। চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য আমরা প্রতিনিয়ত মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিচ্ছি, আশা করছি শিগগিরই সমাধান হবে। হাসপাতালে নিয়ে তার পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, “আমার প্রথম কাজ হবে সবাইকে এক নিয়মের আওতায় আনা। সবাই নিয়ম মেনে চলছে।

তিনি অফিসে আসছেন কিনা তা আমি যাচাই করব। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাদের পোশাক বাধ্যতামূলক করা হবে। হাসপাতালের যেসব কর্মকর্তা ব্যক্তিগত পোশাকে আসবেন, তাদের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। কারণ সরকার সবার পোশাক ঠিক করে দিয়েছে। কে ডাক্তার হবেন, কে নার্স হবেন, কে অফিসার হবেন আর কে কর্মচারী হবেন তা নির্ধারিত হবে পোষাক দেখে। চিকিৎসক ও নার্সদের অবশ্যই নেমপ্লেট ব্যবহার করতে হবে।

সিভিল সার্জন কল্লোল বলেন, আমি যেহেতু নতুন তাই এখনো অনেক জায়গায় ছুঁইনি। হাসপাতালের পাশের চিকিৎসক ও নার্সদের কোয়ার্টার সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে বা কোনো কারণে রাতে জরুরি বিভাগে কোনো চিকিৎসক না থাকলে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে কোয়ার্টার থেকে চিকিৎসক ও নার্সদের সহায়তা পাব। হাসপাতালের চারপাশের অবস্থা খুবই খারাপ। ময়লা-আবর্জনার কারণে নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের পরিবেশ। আমি এই দ্রুত সময়ে পরিষ্কারের যত্ন নেব.
সিভিল সার্জন তৌহিদ আহমেদ কল্লোল জাগো নিউজে ‘চার কোটি টাকার সম্পদের মালিক অফিস সহকারীর স্ত্রী’ শিরোনামে খবর দেখে বলেন, কারা বাড়ি নির্মাণ করেছে, দুর্নীতির মাধ্যমে কারা জমি কিনেছে তা দুদক খতিয়ে দেখবে। আমি শুধু দেখব আমার হাসপাতাল সেক্টরের কেউ দুর্নীতিবাজ কিনা। আমি তার সম্পত্তি দেখব না। তবে হাসপাতাল খাত থেকে তিনি কত টাকা কামিয়েছেন তা অবশ্যই দেখব। সবার মধ্যেই দেখব। সরকার স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য টাকা দেবে, আর মেরে ফেলবে- এটা আমি সহ্য করব না। আমি সবকিছুর হিসাব নেব। হাসপাতালের দুর্নীতির কথা যারা আমাকে জানিয়েছেন, হাসপাতালের খরচের পরিমাণ জানাতে হবে। কারণ আমি স্পষ্টভাবে না লিখলে বা উল্লেখ না করলে অপরাধীকে ধরতে পারব না।

সুনামগঞ্জে নতুন আড়াইশ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে ডা. কল্লোল বলেন, “আমরা ধীরে ধীরে সবকিছু নতুন ভবনে নিয়ে যাব। এখন দেখি কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। লিফট থেকে শুরু করে সব সুইচ চেক করছি, কারণ আমার রোগীরা সমস্যায় পড়বে- তা হবে না। আমরা দ্রুত সব রোগীকে নতুন ভবনে নিয়ে যাব।
সিভিল সার্জন তৌহিদ আহমেদ কল্লোল বলেন, আমি সততার সাথে কাজ করতে এসেছি। আপনারা আমার ও আমার পরিবারের খোঁজ খবর নেন, সরকার আমাকে যে বেতন দেয় তা দিয়ে আমি আমার সংসার চালাই। এক পয়সাও খাব না, কেউ খেতে পারবে না। দুর্নীতি করব না।

আমার বাবা ডেপুটি সেক্রেটারি ছিলেন। তবু টিউশনি করেছেন। তিনি আমাকে কঠোর শিক্ষা দিয়েছেন, আমাকে মানুষ করেছেন। আমি দুর্নীতি করলে কলঙ্ক আমার বাবা ও পরিবারের ওপর পড়বে। আমি আমার বাবা ও পরিবারকে কলঙ্কিত হতে দেব না।
সবশেষে সিভিল সার্জন ডা. কল্লোল বলেন, অনেক সময় আমাকে অনেক ফাইলে সই করতে হয়। আমার মাধ্যমে কোনো ভুল ফাইলে স্বাক্ষর হলে অবশ্যই আপনারা (সাংবাদিকরা) ধরবেন, আমি সংশোধন করব। কারণ অনেক সময় অনেক কিছুই অগোচরে চলে যায়, তাই এই কাজে আপনাদের সহযোগিতা আমার খুব দরকার।