বিজ্ঞান, বাণিজ্য বা মানবিক বিষয়ে পড়ার প্রয়োজন নেই। আরও কী, আমি যা পড়ছি তার সর্বোচ্চ স্তরে নিজেকে নিয়ে যেতে পারি। সব বিভাগ থেকে জীবনে ভালো কিছু করা যায়।
কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসমা জাহান সরকার। ৩৬তম বিসিএসে তিনি প্রশাসন ক্যাডার হয়েছেন। তার গল্প লিখেছেন এম এম মুজাহিদ উদ্দিন।
আসমা জাহান সরকার ১৯৯৩ সালের ১ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিভাগের বাড়িয়া জেলার নবীনগর মহকুমার আহমেদপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম আসমা। বাবা আব্দুল হান্নান সরকার একজন কৃষক, মা খোশনাহার বেগম গৃহিণী। 11 ভাইবোনের মধ্যে
সবাই খুব মেধাবী। তার অন্য ভাই-বোনেরা দেশে-বিদেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে। আসমা গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তিনি প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় জেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে সফল হন।
৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কুমিল্লার ঐতিহ্যে চান্স পান; বাহি নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। অষ্টম শ্রেণির সরকারি বৃত্তি পরীক্ষায় কুমিল্লা জেলায় ৩য় স্থান অধিকার করে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। সে ভালো ছাত্রের ব্যাজ পায়। পরিবারের সদস্যদের স্বপ্ন আসমা বড় হয়ে ডাক্তার হবে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বিজ্ঞান বিভাগে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হন।
2006 সালে কুমিল্লা বোর্ড থেকে বিজ্ঞানে জিপিএ-৫ পেয়ে মাধ্যমিকের দোরগোড়া পার হন। বোর্ড স্কলারশিপ সম্মিলিত মেধা তালিকায় 19তম স্থানে রয়েছে। মাঝমাঠ পার হওয়ার পর আসমা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা পরিবর্তন করে। ডাক্তার হওয়ার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বা সামাজিক বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। পরিবারের অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও বুয়েটে পড়ুয়া দুই ভাইয়ের সহযোগিতায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মানবিক বিভাগে ভর্তি হন। মানবিক বিভাগে ভর্তি হওয়ায় সামাজিকভাবে নানা কড়া কথা শুনতে হয়েছে মানুষকে।
সেদিন মানুষের কড়া কথাকে নিজের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলেন আসমা। তখন থেকেই মনের মধ্যে একটা জেদ তৈরি হয়। তিনি ভেবেছিলেন জীবনে এমন কিছু করবেন। যাতে তাকে সমাজে আলাদা মর্যাদা দেওয়া হয়। তখন থেকেই স্বপ্নযাত্রা শুরু। 2010 সালে মানবিক বিভাগ থেকে GPA_5 সহ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থানে ছিলেন।
এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বি-ইউনিটে ভর্তি হন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ৩৬৪তম হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর পারিবারিক তৃপ্তি ও স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে বিসিএসে আত্মনিয়োগ শুরু করেন। ১ম বর্ষ থেকে তিনি নিয়মিত সাধারণ গণিত ও ইংরেজি চর্চা করতেন। তারপর ৩য় বর্ষ থেকে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি রুটিন করে নিয়মিত বিসিএস সিলেবাস পড়া শুরু করেন।
প্রিলি-লিখিত দুই সিলেবি একসাথে পড়ার চেষ্টা করেছি। আসমা বলেন, “এতে আমার অনেক উপকার হয়েছে। আমি লিখিত পরীক্ষায় অনেক পড়া আয়ত্ত করেছিলাম।” যা লিখিত পরীক্ষায় আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমার বিভাগের অনেক একাডেমিক পড়াশোনা আমার বিসিএসে সরাসরি অবদান রেখেছে। আমি বলব এটি আমার জন্য একটি প্লাস পয়েন্ট ছিল।
আসমা একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিসিএস-এর জন্য পড়াশোনা করলেও রুটিন অনুযায়ী বিভাগেও পড়াশোনা করেছেন। ফলে সে অনার্সে সিজিপিএ-৩.৫২ পেয়েছে এবং বিভাগে নবম স্থান পেয়েছে। CGPA-3.75 সহ মাস্টার্সে ২য় স্থান অর্জন করেছে। এরপর জীবনের প্রথম বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে মেধা প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ পান।
আসমা বলেন, বিজ্ঞান, বাণিজ্য বা মানবিক বিষয়ে পড়ার দরকার নেই। তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন আমি যা পড়ছি তার সর্বোচ্চ স্তরে নিজেকে নিয়ে যেতে পারব কিনা। সব বিভাগ থেকে জীবনে ভালো কিছু করা যায়।
প্রথম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার পাওয়ার অনুভূতি কেমন? এমন প্রশ্নের জবাবে আসমা বলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে আর্থ-সামাজিক অবস্থা এমন যে একজন বিসিএস ক্যাডার তার তিন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে। যেমন- বাবার প্রজন্ম, নিজের প্রজন্ম, পরবর্তী প্রজন্ম।
বিসিএস প্রশাসন আমার কাছে সত্যিই স্বপ্নের নাম ছিল। আর আমি আমার স্বপ্ন পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি। আর আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মহান আল্লাহ আমাকে তাঁর আলোয় আলোকিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।
এখন আমার আরেকটি বড় স্বপ্ন আছে- আমি সচিব হতে চাই। আমার বাবা-মা, ভাই-বোনেরা গর্ব করে বলতে পারেন, আমাদের মেয়ে আমাদের পরিবার ও সমাজকে অনেক কিছু দিয়েছে। সাফল্য নিয়ন্ত্রণে কোন বিষয়গুলো ভূমিকা রেখেছে জানতে চাইলে আসমা বলেন, “নির্দিষ্ট লক্ষ্য, পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস এই তিনটি জিনিসই আমাকে আজকের সাফল্য এনে দিয়েছে।”
তিনি অসমিয়া জননীতি এবং সুশাসন নিয়ে আরও গবেষণা করতে চান। তিনি তার একাডেমিক জ্ঞানকে আমার পেশাগত জীবনে প্রয়োগ করে এদেশের সাধারণ মানুষের উপকার করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আসমা আগামীকালের বিসিএসের স্বপ্নের প্রার্থীদের পরামর্শ দিচ্ছেন, “আমি আপনাকে প্রথমে আপনার লক্ষ্য নির্ধারণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
কঠোর পরিশ্রম করুন, নিজের উপর আস্থা রাখুন। আপনার ড